ঢাকা , রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫ , ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদীতে সরকারি চাকুরিবিধি অবজ্ঞা করে শিক্ষিকার সংবাদ সম্মেলন দুই শিক্ষিকাকে কর্তৃপক্ষের শোকজ।​


আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-০২ ২১:৩৪:১৮
কটিয়াদীতে সরকারি চাকুরিবিধি অবজ্ঞা করে শিক্ষিকার সংবাদ সম্মেলন দুই শিক্ষিকাকে কর্তৃপক্ষের শোকজ।​ কটিয়াদীতে সরকারি চাকুরিবিধি অবজ্ঞা করে শিক্ষিকার সংবাদ সম্মেলন দুই শিক্ষিকাকে কর্তৃপক্ষের শোকজ।​

এম এ কুদ্দুছ , কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: মিথ্যা অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিয়ে সরকারি চাকুরিবিধি অবজ্ঞা করে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


জানা গেছে, সংবাদ সম্মেলন করার জন্য তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতিও নেননি। বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনটি করেছেন কটিয়াদী উপজেলার বেথৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মি। প্রাক-প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকহারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মির বাবা মশিউর রহমান জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা।


অপরদিকে, তাহার স্বামী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের প্রভাশালী নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে সহকারি শিক্ষিকা উর্মি তাহার স্বামীর ক্ষমতার ও আওয়ামী লীগের দাপট দেখাতেন। উর্মির স্বামী বর্তমানে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায় কর্মরত আছে।


৫ ই আগস্ট-২০২৪ এর পর আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার হওয়ার পরপরই তাহমিনা রহমান উর্মি তাহার স্বামীর ক্ষমতার দাপট পাল্টে পিতা মশিউর রহমানের রাজনৈতিক দলীয় দাপট দেখাতে শুরু করেছেন।


এদিকে, সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মি প্রধান শিক্ষিকার কাছে অসুস্থতার অজুহাতের কথা বলে মঙ্গলবার ২৯ জুলাই আবেদন করেন বুধবার (৩০ জুলাই) এক দিনের নৈমিত্তিক ছুটি চেয়ে একটি ছুটির আবেদন করেন।


প্রধান শিক্ষিক ছুটি মঞ্জুরও করেছেন। কিন্তু ছুটি নিয়ে উর্মি বুধবার কিছু মহিলাকে নিয়ে জেলার কটিয়াদী সদরের ‘স্বপ্ন কুঞ্জ’ নামক একটি কমিউনিটি সেন্টারে তাহার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশন করানোর অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষিকা সাদেকা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।


সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনার রহমান উর্মির লিখিত বক্তব্য ইতিমধ্যে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট সরবরাহ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তাহমিনার রহমান উর্মী তাহার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট যে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকদের সামনে তাহার বর্ণনা দেন এবং প্রধান শিক্ষিকার কিছু অনিয়মের কথাও তুলে ধরেছেন।


প্রধান শিক্ষিকা সাদেকা ইয়াসমিন এ বিষয়ে ইনকিলাবকে জানান, একজন শিক্ষকের বছরে ২০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি পাওনা থাকে। সেই হিসেবেই ছুটির আবেদন মঞ্জুর করেছেন। অপরদিকে বিভাগীয় অনুমতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তাহমিনা রহমান উর্মি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যখন এলাকার মানুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিল, তখন অনুমতি নিয়েছিল? সংবাদ সম্মেলন করার জন্য অসুস্থতার কথা বলে নৈমিত্তিক ছুটি নিয়েছিলেন কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।


অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না, যদি না তারা বিশেষভাবে সরকারের অনুমতিপ্রাপ্ত হন অর্থাৎ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রাপ্ত হন।


সাধারণত, সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে প্রেস রিলিজ বা সরকারি বিবৃতির মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু সংবাদ সম্মেলন করার জন্য সরকারের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর বিধি ২০-এ বলা হয়েছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় কোনো তথ্য বা সরকারি দলিল অন্য কারো সাথে (সংবাদ মাধ্যম সহ) প্রকাশ করতে পারবেন না, যদি না তিনি বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন।


অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ তে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন অপরাধ এবং তাদের জন্য প্রযোজ্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এর মধ্যে অসদাচরণ একটি গুরুতর অপরাধ, এবং সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের নীতি বা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।


অতএব, সরকারি কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলন করার ক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট অনুমতি প্রয়োজন। এবং অনুমতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করলে তা বিধিমালার লঙ্ঘন হতে পারে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলমকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তাহমিনা রহমান উর্মি কোন অনুমতি গ্রহণ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষা অফিসার বলেন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না।


এদিকে, তাহমিনা রহমান উর্মির বিরুদ্ধে এলাকাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে কিন্তু বিগত আওয়ামী শাসন আমলে তার স্বামীর (ছাত্রলীগের) ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখে প্রকাশ করতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর এলাবাসী ভেবেছিল এখন হয়তো এই উগ্র বদমেজাজিকে এখান থেকে অন্যত্র বদলী বা ফ্যাসিস্ট সুবিধাভোগী এইশিক্ষিকাকে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।


কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পর এবার উগ্র এই মহিলার উগ্রতা আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাল ধরলেন তার পিতা কুলিয়ারচর উপজেলার স্থানীয় বিএনপি নেতা মশিউর রহমান। উগ্র শিক্ষিকাকে এই বিদ্যালয়ে থাকলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুপথে আনার চেয়ে বিপথে নেয়ার আশঙ্কা বেশী। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষাও যদি রাজনৈতিক ব্যানারে কোন উগ্রতার হাতে জিম্মি থাকে তবে কি দরকার ছিল ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানের। এলাবাসী তাহমিনা রহমান উর্মির উগ্রতার কবল থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তি চায়।


২৪এর বিপ্লবের পরও কুলিয়ারচর থেকে বিএনপি-র দলীয় লোকজন কটিয়াদী এসে দলীয় প্রভাব বিস্তার করাকে ফ্যাসিস্টের নাশকতার পূর্বাবাস বলে দাবী করছেন। এদিকে দুই শিক্ষিকার বিদ্যমান দ্বন্ধের কারণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গত ৩০ শে জুলাই ৩৮.০১.৪৮০০.০৪৫.২৭.০০১.২৫.১২৩২ নং স্মারকে প্রধান শিক্ষিকা সাদিকা ইয়াসমিন ও সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।


তিন কার্য দিবসের মধ্যে শিক্ষিকাদ্বয়কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে। যার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মিরপুর ঢাকা। উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, ঢাকা বিভাগ, মিরপুর ঢাকা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কটিয়াদী কিশোরগঞ্জ।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ